বিশ্বের ৭টি বিস্ময়কর বস্তুর তালিকা
প্রাচীন কাল
থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ বিস্ময়কর বস্তুর তালিকা তৈরি করে চলেছে। যে হেতু এ বিষয়ে
কোনও নির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই, তাই কোনগুলিকে বিষ্ময়কর বস্তু বলা উচিত সে বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে
কোনও ঐকমত্য নেই। গ্রিকরা মনে করত, ৭ সংখ্যাটি ‘নিখুঁত’ ও
‘বহু’র পরিচায়ক। সেই থেকেই ৭টি বিস্ময়কর বস্তু নিয়ে এই উন্মাদনার শুরু। ‘এটা’ হবে
নাকি ‘ওটা’ সেই নিয়ে আলোচনাও শুরু সেই থেকেই। যাই হোক গোটা পৃথিবী জুড়ে সম্প্রতি
একটি সমীক্ষা হয়েছে। তাতে ৭টি বিস্ময়কর বস্তুর নতুন তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
চিচেন ইৎজার পিরামিড (৮০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে) য়ুকাতান উপদ্বীপ, মেক্সিকো
চিচেন ইত্জ়া হল
মায়া সভ্যতার সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দির-শহর। এই শহরটি মায়া সভ্যতার রাজনৈতিক ও
অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্র ছিল। এর বিভিন্ন স্থাপত্যগুলি – কুকুলকান পিরামিড, চাক মুলের মন্দির, হাজার
স্তম্ভ বিশিষ্ট সভাগৃহ এবং কয়েদিদের খেলার মাঠ – এই সব জিনিস আজও দেখা যাবে,
যা স্থাপত্যবিদ্যার এবং নির্মাণশৈলীর এক অসামান্য কীর্তির পরিচয় বহন
করে। এই পিরামিডটি মায়া মন্দিরগুলির মধ্যে সর্বশেষ এবং অনেকের মতে সর্বশ্রেষ্ঠ।
ত্রাণকর্তা প্রভু যিশু (১৯৩১) রিও ডি জেনেইরো, ব্রাজিল
যিশুর এই
মূর্তিটি প্রায় ৩৮ মিটার উঁচু এবং রিও ডি জেনেইরোর সামনে করকোভাদো পাহাড়ের মাথায়
স্থাপিত হয়েছে। হাইটর দ্য সিলভা কোস্টা নামের এক ব্রাজ়িলীয়ের করা নকশা অনু্যায়ী
ফরাসি শিল্পী পল ল্যান্ডোওস্কি এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন, যা বিশ্বের সেরা স্মৃতিসৌধগুলির অন্যতম। এই
মূর্তিটি তৈরি করতে পাঁচ বছর সময় লেগেছিল। এটি উদ্বোধন করা হয় ১৯৩১ সালের ১২ অক্টোবর।
অতিথিদের সর্বদা দু’হাত বাড়িয়ে আপন করে নিতে প্রস্তুত ব্রাজ়িলীয়দের এবং এই শহরের
প্রতীক হয়ে উঠেছে মূর্তিটি।
রোমের কলোসিয়াম (৭০-৮২ খ্রিস্টাব্দ) রোম, ইতালি
রোমের
কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিশাল অ্যাম্ফিথিয়েটারটি নির্মিত হয়েছিল বিজয়ী রোমান
সৈন্যদের পুরস্কৃত করার জন্য এবং রোম সাম্রাজ্যের গৌরবগাথা তুলে ধরার জন্য। এর
পরিকল্পনা ও নকশা আজও একই রকম প্রাসঙ্গিক এবং আজ ২০০০ বছর পরেও ওই কলোসিয়ামের
অতুলনীয় নকশার অমোঘ ছাপ আধুনিক যুগের প্রায় প্রতিটি ক্রীড়াঙ্গনেই খুঁজে পাওয়া
যাবে। সেইসময়ের দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য ওই কলোসিয়ামের আঙিনায় ঘটে যাওয়া নৃশংস
মারামারি এবং খেলাধুলো সম্পর্কে আজকাল ছায়াছবি এবং ইতিহাসের বইপত্রের মাধ্যমে আমরা
অনেক বেশি ওয়াকিবহাল, যা তখনকার দর্শকদের আনন্দ দিত।
তাজমহল (১৬৩০ খ্রিস্টাব্দ) আগ্রা, ভারত
পঞ্চম মোঘল
সম্রাট শাহজাহানের আদেশে, তাঁর প্রিয়তমা বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এই বিশাল
স্মৃতিসোধটি নির্মিত হয়েছিল। সুবিন্যস্ত, প্রাচীর ঘেরা
বাগানে শ্বেতমর্মরে প্রস্তুত এই তাজমহল ভারতে মুসলমানি শিল্পের সর্বাপেক্ষা অনুপম
রত্ন বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সম্রাটকে পরবর্তীকালে বন্দি হতে হয়েছিল এবং কথিত আছে
যে, তখন তিনি তাঁর ছোট্ট কুঠুরির একটি জানালা দিয়েই কেবলমাত্র
তাজমহলকে দেখতে পেতেন।
চীনের প্রাচীর (খ্রিস্টপূর্ব ২২০ এবং ১৩৬৮-১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) চীন
চিনের
মহাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল বর্তমান সুরক্ষা উপকরণগুলিকে সংযুক্ত করে একক
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আনা এবং মোঙ্গল উপজাতিগুলির আক্রমণ ঠেকিয়ে তাদের চিন
থেকে দূরে রাখার লক্ষ্যে। মানব নির্মিত পুরাতাত্বিক নিদর্শনগুলির মধ্যে এটিই
বৃহত্তম। এবং একটি বিতর্কিত মত হল যে, এটি পৃথিবীর একমাত্র বস্তু, যা মহাকাশ
থেকে দেখা যায়। এই অতিকায় কীর্তিটি গড়তে নিশ্চিত ভাবেই হাজার হাজার মানুষ জীবন
বলিদান দিয়েছেন।
মাচু পিছু (১৪৬০-১৪৭০) পেরু
পঞ্চদশ শতকে
ইনকা সম্রাট পাকাশুটেক পাহাড়ে মেঘের মধ্যে এক শহর নির্মাণ করেন, যা মাচু পিছু (“পুরনো পাহাড়”) নামে পরিচিত।
এই অসাধারণ বসতিটি আন্দিস মালভূমিতে ওঠার পথে মাঝ রাস্তায়, আমাজ়নের
গভীর জঙ্গলে এবং উরুবম্বা নদীর ওপরে অবস্থিত। সম্ভবত গুটিবসন্ত রোগ ছড়িয়ে পড়ায়
ইনকারা এই জায়গা পরিত্যাগ করে এবং স্পেনীয়রা ইনকা সাম্রাজ্যকে পরাজিত করার পর
প্রায় তিনটি শতক এই শহরটি “হারিয়ে” যায়। হিরম বিংহ্যাম ১৯১১ সালে একে পুনরায় খুঁজে
বার করেন।
পেত্রা (খ্রিস্টপূর্ব ৯- ৪০ খ্রিস্টাব্দ) জর্ডান
আরব মরুভূমির
ধারে, নবাটায়েন সাম্রাজ্যের
রাজা চতুর্থ আরেটাসের (খ্রিস্টপূর্ব ৯ – ৪০ খ্রিস্টাব্দ) উজ্জ্বল
রাজধানী ছিল পেত্রা। জল বহন ও সংরক্ষণ প্রযুক্তিতে পারদর্শী নবাটাইনরা তাদের শহরে
বড় বড় সুড়ঙ্গ ও জলধারক কুঠুরি নির্মাণ করেছিল। গ্রীকো-রোমান শৈলির অনুকরণে নির্মিত
একটি নাট্যশালায় ৪০০০ দর্শকের বসার ব্যবস্থা ছিল। এল-ডেয়ার আশ্রমের উপরে অবস্থিত ৪২
মিটার উঁচু হেলেনীয় মন্দিরদ্বার সহ পেত্রার প্রাসাদোপম সমাধিগুলি আজ মধ্য-পূর্ব
এশিয়ার সংস্কৃতির উৎকৃষ্ট নিদর্শন।
No comments:
Post a Comment