Tuesday, January 21, 2020

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান কিছু সমস্যা ও সমাধানে আমাদের করনীয়ঃ

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। শিক্ষার আলোয় আলোকিত ব্যক্তি এবং জাতি সবসময় উন্নতি ও অগ্রগতির শীর্ষে অবস্থান করে। এরূপ শিক্ষিত শ্রেণিই সবসময় নেতৃত্বের আসনে থাকে। কিন্তু শিক্ষা তখনই এরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন নাগরিক তৈরি করতে সমর্থ হবে যখন তা হবে উপযুক্ত মানসম্পন্ন। কেবল মানসম্পন্ন আধুনিক যুগোপযোগী শিক্ষাই পারে যোগ্য ও দক্ষতা সম্পন্ন জনবল তৈরি করতে। আর এজন্যই শিক্ষার মানোন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য স্বাধীনতার পরপরই শিক্ষানীতি প্রণয়ণ করা হয়। পাকিস্তান আমলের কয়েকটি শিক্ষানীতির সঙ্গে অনেকটা মিল রেখেই তৈরি করা হয় শিক্ষানীতি। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতার রদবদলে বারবার শিক্ষানীতির পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষার স্তর, পাবলিক পরীক্ষাসমূহ, পাঠ্যবই, পাঠ্যসূচি থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফলাফল ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়াদি অনেকবারই ব্যাপক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে। এটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের ভেতর নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করছে পরোক্ষভাবে। সর্বশেষ শিক্ষানীতি-২০১০ (যা বেশ কয়েকবার সংশোধিত, পরিমার্জিত হয়েছে) অনুসারে সরকার একটি স্থিতিশীল শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনার প্রয়াস চালিয়েছে। সেই নীতি অনুসারে এখন বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার্থীকে মুখস্ত পড়ার পরিবর্তে সৃষ্টিশীল পদ্ধতিতে শেখানোর জন্য চালু করা হয়েছে ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’। প্রতি বছর কোটি কোটি বই সরকার ছাপিয়ে বিনামূল্যে পৌঁছে দিচ্ছে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে। বাজেটের একটি বড় অংশ থাকছে ‘শিক্ষাখাতে’। প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি শিক্ষার্থীও পড়ার বইটি যথাসময়ে পেয়ে যাচ্ছে। এসবই জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের ইতিবাচক দিক। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্নটিও নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এনসিটিবি-র ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে সকল শ্রেণির সকল বিষয়ের বইয়ের সফ্টকপি। এগুলো সবগুলোই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির কথাই নির্দেশ করে। তবে সরকারের একটি বিষয়ের প্রতি খুব বেশি মনোযোগী হতে হবে। তাহলো- ‘শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি’। প্রতিটি শিশু স্কুলে যাক- এই চাওয়া নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কিন্তু তার সঙ্গে এটিও চাওয়া প্রয়োজন যে শিশু যেন স্কুলে গিয়ে পড়াশুনার প্রতি আগ্রহী হয়, নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং সামাজিকতা শেখে। দেখা যায় একজন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনকারী মেধাবী ছাত্র পেশা হিসেবে কখনই শিক্ষকতাকে বেছে নিতে চান না। শিক্ষকতাকে খাটো চোখে দেখা হয় বরাবরই। সামাজিক এই সমস্যাটি রাষ্ট্রের জন্য সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক। অবশ্য সামাজিক সমস্যাটি অর্থনীতির সঙ্গেও জড়িত। শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি অন্য যে কোন পেশার থেকে অনেক কম। এটি অবশ্যই শিক্ষকতা পেশার জন্য সঙ্কটজনক। এইসব কারণে অনেক ক্ষেত্রেই যোগ্য ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে পায় না নতুন প্রজন্ম। বিদ্যালয়ে গিয়ে একজন আদর্শবান ব্যক্তিকে যদি কোন শিশু না-ই পায় তবে তার শিক্ষার প্রতি আগ্রহ-ই তো জন্মাবে না। যারা শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন তাদের জন্যও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা লক্ষ করা যায় না। প্রশিক্ষণের নামে কয়েকটি দিন অবশ্য অতিবাহিত হয় এবং রাষ্ট্রের কিছু অর্থ বিনষ্ট হয়। ফলে ক্লাসে পাঠদানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসহ যাবতীয় বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত না হওয়া ব্যক্তিরাই দিনের পর দিন ক্লাস নিতে থাকে। সেখানে শিক্ষার উদ্দেশ্যটাই ভালোভাবে ফুটে ওঠে না শিক্ষার্থীদের কাছে। তাই দরকার আমাদের শিক্ষার মানোন্নয়ন।

শিক্ষার মানোন্নয়ন:
মান বা গুণ বলতে সাধারণভাবে কোনো ব্যক্তি, বস্তু, পণ্য, ঘটনা, ফলাফল ইত্যাদির কাঙ্ক্ষিত অবস্থাকে বুঝানো হয়। গুণগত বা মানসম্পন্ন শিক্ষা বলতে শিক্ষার আদর্শ মানকে বোঝানো হয়, যা সেই শিক্ষা থেকে প্রত্যাশা করা হয়। শিক্ষার এই মানকে দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়
(ক) শিক্ষার পরিমাণগত মান এবং (খ) শিক্ষার গুণগত মান।
(ক) শিক্ষার পরিমাণগত মান: শিক্ষা সবার মৌলিক চাহিদা। আন্তর্জাতিক চুক্তি, সম্মেলন এবং বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সবাই শিক্ষা লাভের অধিকারী। প্রতিটি নাগরিকের নিকট শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। এভাবে শিক্ষা কতগুলো মানুষের নিকট পৌঁছানো হলো, কতসংখ্যক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তি হলো, তাদের পাশের হার কত, ছেলে মেয়ে শিক্ষার্থীদের অনুপাত কত, শিক্ষকের সংখ্যা কত, বিদ্যালয়ের সংখ্যা, বিদ্যালয় প্রতি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ইত্যাদি হলো শিক্ষার পরিমাণগত দিক। শিক্ষার পরিমাণগত দিকে কেবল সংখ্যাকেই দেখা হয় এর মান বা গুণাবলীর দিকে লক্ষ্য রাখা হয় না। যেমন- প্রতি বছর বাংলাদেশের পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে জিপিএ ৫ এবং পাশের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি শিক্ষার পরিমাণগত দিকের উন্নতি নির্দেশ করে।
(খ) শিক্ষার গুণগত মান: শিক্ষার গুণগত মানের ক্ষেত্রে দেখা হয় শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু উপকৃত হচ্ছে। জিপিএ ৫ এবং পাশের হার বৃদ্ধি পেলেও তারা কতটুকু মান সম্পন্ন শিক্ষা অর্জন করতে পারল, তাই এখানে মূখ্য। শিক্ষার্থীদের যে স্তর শেষে যে যোগ্যতা অর্জন করার কথা, তা কতটুকু অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে, এখানে তা দেখা হয়। এরূপ মান উন্নয়নে উপযুক্ত শিক্ষক, যথাযথ ব্যস্থাপনা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদেরকে মূল্যায়ন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান কিছু সমস্যাঃ
শিক্ষার স্তরঃ আমাদের দেশে শিক্ষার প্রধান স্তর তিনটি। যথাঃ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তর। আর আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাঁচটি স্তরে বিভক্ত। যেমন- প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। শিক্ষার এসব স্তরের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় ও ধারাবাহিকতা না থাকার ফলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় এক অরাজকতা ও বেহাল দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর এখনো অবহেলার পর্যায়ে। হাতেগোনা কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি হিসেবে সুযোগ সুবিধা পেলেও এখনও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সেই সুবিধা পায়না। অথচ শিক্ষা-কারিকুলাম অনুযায়ী একই বই, সিলেবাস ও একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা হচ্ছে। বিস্তর ব্যবধান পরিলক্ষিত হয় সাধারণ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেনীর পাঠ্য পুস্তকের সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যম ও-লেভেল কিংবা এ-লেভেল শিক্ষাব্যবস্থায়। এ স্তরের সমন্বয় সাধন জরুরি হলেও সরকার এখনও অনেকটা উদাসীন।
স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষাঃ সেই বৃটিশ আমল থেকেই স্কুল ও মাদ্রাসা এই দুই ধরণের শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকায় সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। এ দু ধরণের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে দর্শনগত অমিল অনেক। যার বিরুপ প্রভাব শিক্ষার্থীদের উপর পড়ে ও তারা একে অপরকে বন্ধু না ভেবে শত্রু ভাবে। 
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কঃ বর্তমান সময়ে শিক্ষার অবনতির ফলে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানচর্চার প্রতি নিবিষ্ট নয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে এখনকার ছাত্ররা যতটা বেপরোয়া এবং উন্নত জীবনযাপনের ধান্ধায় শিক্ষকরাও ততটা বৈষয়িক। এর ফলে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ বাড়ছে এবং শিক্ষাঙ্গনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
ছাত্র রাজনীতিঃ দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন রাজনীতির কুপ্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। হত্যা, সন্ত্রাস এখনকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা পেয়ে তা আকঁড়ে থাকার রাজনীতি ছাত্র সমাজের মধ্যে দুষ্ট প্রভাব ফেলেছে, তারই ফলে দেশের বিদ্যাপীঠগুলো যেন রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। এতে শিক্ষার মানের ঘটেছে চরম অবনতি।
ডিগ্রী অর্জনের স্পৃহাঃ  আজকাল জ্ঞানের থেকে ডিগ্রী অর্জনের দিকে অনেকের দৃষ্টি। তাই লেখাপড়ায় ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ অনেকটা কমে আসছে। কোনোরকম একটা ভালো ডিগ্রী অর্জনের প্রত্যাশায় তারা অবৈধ উপায় অবলম্বন করছে। সহজে পাশ করার লোভে অনেকেই ছুটে চলে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা কোচিং সেন্টারের দিকে। কম পড়ে পাশ করার জন্য অনেক শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই পরিহার করে ঝুকেঁ পড়ছে নোট ও গাইড বইয়ের প্রতি।
শিক্ষকদের উদাসীনতা ও ব্যবসায়িক মনোভাবঃ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা সন্তোষজনক নয় বিধায় তারা লাভের আশায় গৃহশিক্ষক বা কোচিং সেন্টারের প্রতি অধিক তৎপর। বিদ্যা যেখানে অর্থের বিনিময়ে বেচাকেনা হয় সেখানে শিক্ষার মান বড় কথা নয়, ডিগ্রীই মূল লক্ষ্য। তাই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়, ফলাফল তৈরিতে কারচুপি হয়, এতে দেখা যায় অনেকের পরীক্ষা না দিয়েও ভালো রেজাল্ট আসে আবার কেউ ভালো পরীক্ষা দিয়েও কাঙ্খিত ফল পায়না। এতে অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অন্ধকারে তলিয়ে যায় ও শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে যায়।
অপসংস্কৃতির প্রভাবঃ একথা বলতে দ্বিধা নেই যে সারা দেশ এখন অপসংস্কৃতির জোয়ারে ভাসছে। রেডিও টেলিভিশনের অশ্লীল অনুষ্ঠান, কুরুচিপূর্ণ চলচ্চিত্র, ফেসবুক, ইউটিউব, স্যাটেলাইট চ্যানেল ইত্যাদি নবীন শিক্ষার্থীদের মনে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। তাই অধ্যয়ন থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। আমাদের অভিভাবক সচেতন হলে এরকমটা কখনো হতোনা।
ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাপদ্ধতিঃ স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ ৪৭ বছরে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষায় পাশের হার, বর্তমানে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির হার বৃদ্ধি পেলেও অভিভাবকদের আনন্দিত হওয়ার পরিবর্তে তারাঁ গভীর আশংকাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কারণ শিক্ষার গুনগত মানের ও শিক্ষা পরবর্তী কর্মজীবনের অনিশ্চয়তার জন্য। পৃথিবীর অন্য দেশগুলো যেখানে পাবলিক পরীক্ষা কমিয়ে প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক মূল্যায়ণ পদ্ধতিতে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েছে সেখানে আমরা উল্টো পথে হাটছি। আমাদের দেশে পাবলিক পরীক্ষা বাড়িয়ে দিয়ে তার উপর গুরুত্ব দেয়া হয় বেশি, কোনোরকম ভালো রেজাল্ট করেই সেই পুঁথিগত সার্টিফিকেটের মূল্যায়ন করা হয়। ফলে এখানে মেধার ও দক্ষতার মূল্যায়ন হয়না।
শিক্ষাক্ষেত্রে এসব মৌলিক সমস্যার সমাধান করলেই শিক্ষার মান বৃদ্ধির সাথে নৈতিক গুণাবলীসম্পন্ন জাতি ও দেশ গঠন সম্ভব।

শিক্ষার মান বৃদ্ধি, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সুনিশ্চিত ভবিষ্যত গঠনের জন্য আমাদের এবং সরকারের করনীয়ঃ
১। একটি আধুনিক পূর্ণাঙ্গ এবং দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষানীতি প্রণয়ণ করতে হবে। সেই শিক্ষানীতির যথাযথ বাস্তবায়নের অবকাঠামোগত কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে।
২। শিক্ষকতা পেশাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হবে।
৩।  শিক্ষকদের সঠিক ও যুগোপযোগী ট্রেনিং এর ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রয়োগ করতে বলতে হবে। সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
৪। শিক্ষকদের বেতন কাঠামো সন্তোষজনক ও তাদের সঠিক মুল্যায়ন করতে হবে। এতেকরে শিক্ষকরা দুর্ণীতিগ্রস্ত হতে পারবে না।
৫। শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের তথ্য-প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিখাতে হবে।
৭। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা বাড়াতে হবে।
৮। পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার বা বেশি নম্বর পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতাকে নিরুৎ
সাহিত করতে হবে।
৯। শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষামূলক বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কেই প্রাধান্য দেয়া নিশ্চিত করে যাবতীয় কোচিং ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে।
১১। পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা কমাতে হবে।
১২। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সিলেবাসের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন জরুরি। বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে তা জরুরি।
১৩। দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। বিশেষ করে স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষার সমন্বয় সাধন।
১৪। প্রশ্নফাঁস রোধ, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নকল করা, প্রাতিষ্ঠানিক নানা অপকর্ম এবং পরীক্ষাকেন্দ্রে কতিপয় শিক্ষকদের উত্তর বলে দেয়ার মত কাজগুলো শক্ত হাত বন্ধ করতে হবে।
১৫। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে।
১৬। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার মান বজায় রাখার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে বেচাকেনা করার সুযোগ দেয়াটা অনৈতিক এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে।   
১৭। মেধার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক কোটার ব্যবস্থা করতে হবে ও ভর্তি কার্যক্রমে যেনো কোনো দুর্ণীতি না হয় সেদিকে আমাকে,আপনাকে ও সরকারকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
১৮। শিক্ষায় যাবতীয় দুর্ণীতি রোধে কঠিন আইনের ব্যবস্থা নিয়ে তার যথাযথ প্রয়োগও করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের অভিভাবকদেরও অনেক সচেতন হতে হবে তাদের সন্তানদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে।

উপরোক্ত কার্যক্রম যদি সঠিক করতে পারি তাহলে আমরা খুব তাড়াতাড়ি সু-শিক্ষিত ও সুনাগরিক হিসেবে জাতি গঠন করতে পারবো। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যত রেখে যেতে পারবো।

আমরা জোড়াতালি দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, এমনকি সরকারি কাজকর্মও চালাতে পারি, কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে জোড়াতালির কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষা হচ্ছে বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠ জায়গা, যার সুফল একটি পুরো দেশ পায়। শিক্ষার মাধ্যমেই একটা জাতির মানদন্ড নির্ধারিত হয়। তাই শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আলোকিত শিক্ষাই আমাদের সকলের একমাত্র কাম্য। সেই পথেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তবেই বাংলাদেশ সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত হবে।

লেখকঃ
আঃ নঃ মঃ মহিবুল্লাহ, শিক্ষক, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
ই-মেইলঃ a.mohibullah@gmail.com


No comments:

Post a Comment

TEFL Certificate

TEFL (Teaching English as a foreign language ) Certificate